শনিবার থেকে দিল্লির ইন্দিরা গান্ধী ইন্ডোর স্টেডিয়ামে শুরু হয়েছে ভারতে বিরোধী দল জাতীয় কংগ্রেসের প্ল্যানারি অধিবেশেন। এ অধিবেশন থেকে কংগ্রেস নেতৃত্বাধীন ইউনাইটেড প্রগ্রেসিভ এলায়েন্সের (ইউপিএ) চেয়ারম্যান সোনিয়া গান্ধী আঙুল তুললেন, সরকারি দলের নেতাদের দুর্নীতি বা কালো টাকা দমনের নামে মোদি সরকারের 'নাটকের' দিকে। আর তার ছেলে কংগ্রেস সভাপতি রাহুল গান্ধী সরকারের বিদ্বেষের রাজনীতি নিয়ে কথা বললেন।
দলের সভাপতি হওয়ার পর প্রথমবারের মতো পূর্ণাঙ্গ অধিবেশনে বক্তব্য দিতে গিয়ে শনিবার চার মিনিট সময় নিয়েছেন রাহুল। তার বক্তব্যজুড়ে ছিল দেশটির প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি, তার দল ও সরকারের সমালোচনা। রাহুল বলেন, কংগ্রেস ও বিজেপির মধ্যে আকাশ-পাতাল পার্থক্য। ওরা বিদ্বেষে বিশ্বাস করে। আমাদের হাতিয়ার ভালবাসা। কংগ্রেস যে কাজ করে, তা শুধু দেশের জন্যেই করে।
তিনি আরও বলেন, প্ল্যানারি অধিবেশনের উদ্দেশ্য একটাই। আলোচনার মাধ্যমে কংগ্রসকে আরও শক্তিশালী করে তোলা।
আর মোদি সরকারের তীব্র সমালোচনা করে সোনিয়া গান্ধী বলেন, আমরা প্রমাণসহ সরকারের কুকীর্তি, দুর্নীতি, প্রতারণার বিভিন্ন ঘটনা সামনে এনেছি। দেশের মানুষ এখন বুঝে গেছে, ২০১৪ সালে দেওয়া 'সবকা সাথ সবকা বিকাশ' এবং 'না খাব, না খেতে দেব'র মতো সব প্রতিশ্রুতি ছিল স্রেফ নাটক এবং ক্ষমতায় আসার কৌশল।
অধিবেশনে আরেকটা গুরুত্বপূর্ণ প্রস্তাব দিয়েছে কংগ্রেস। নির্বাচন কমিশনের কাছে তাদের দাবি, ইভিএম বাতিল করে পেপার ব্যালট ফিরিয়ে আনা হোক।
দু'দিনের প্ল্যানারি অধিবেশনে যোগ দিতে, দেশের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে এসেছেন কংগ্রেসের প্রায় ১২ হাজার নেতা-নেত্রী। রাহুলের বক্তব্যের সময় উপস্থিত ছিলেন- সাবেক প্রধানমন্ত্রী মনমোহন সিং, সাবেক অর্থমন্ত্রী পি চিদম্বরম ও গুলাম নবি আজাদের মতো নেতারা।
শুক্রবার বসেছিল কংগ্রেসের স্টিয়ারিং কমিটির বৈঠক। চলতি প্ল্যানারি অধিবেশনে কংগ্রেসের নতুন ওয়ার্কিং কমিটি গঠন করা হবে। কংগ্রেসের একাংশ বলছে, অধিবেশনে ২০১৯ সালের লোকসভা ভোটের রণকৌশল নিয়ে আলোচনা হবে। পাশাপাশি নির্বাচনে কোন কোন দলের সঙ্গে জোট হতে পারে, তার ইঙ্গিত মিলতে পারে অধিবেশন থেকে।
এদিকে শনিবার নয়াদিল্লিতে কংগ্রেসের শীর্ষ নেতাদের সঙ্গে বৈঠক করেছে দেশটিতে সফররত আওয়ামী লীগ প্রতিনিধি দল। বৈঠকে সোনিয়া গান্ধী, রাহুল গান্ধী, ড. মনমোহন সিং এবং দেশটির সংসদের বিরোধীদলীয় উপনেতা আনন্দ শর্মা উপস্থিত ছিলেন। আওয়ামী লীগ প্রতিনিধিদলে ছিলেন- দলের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য ড. আবদুর রাজ্জাক, যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক ডা. দীপু মনি ও উপ-দপ্তর সম্পাদক ব্যারিস্টার বিপ্লব বড়ুয়া।
বৈঠক শেষে ব্যারিস্টার বিপ্লব বড়ুয়া জানান, অত্যন্ত সৌহার্দ্যপূর্ণ পরিবেশে বৈঠক হয়েছে। এতে বাংলাদেশের নানা বিষয় উঠে আসে।
এ সময় সোনিয়া গান্ধী বলেন, আওয়ামী লীগের সঙ্গে কংগ্রেসের ঐতিহাসিক বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ক রয়েছে। শেখ হাসিনার নেতৃত্বাধীন সরকার বাংলাদেশের সব খাতের উন্নয়নে অনেক কাজ করেছে।
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার আমন্ত্রণে ও ভারতের প্রয়াত প্রধানমন্ত্রী ইন্দিরা গান্ধীকে দেওয়া বিশেষ সম্মাননা 'বাংলাদেশ স্বাধীনতা সম্মাননা' (মরণোত্তর) পদক গ্রহণ করতে ২০১১ সালের ২৪ জুলাই বাংলাদেশে আসেন সোনিয়া গান্ধী। সেই কথা স্মরণ করে তিনি জানান, বাংলাদেশ সফরের সময় আওয়ামী লীগ সরকারের আতিথেয়তায় মুগ্ধ হয়েছিলেন তিনি।
১৯৭২ সালে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান পাকিস্তান কারাগার থেকে মুক্তিলাভ করে বাংলাদেশে ফেরার পথে দিল্লি এয়ারপোর্টে যান। ওই সময় বঙ্গবন্ধুকে অভ্যর্থনা জানাতে বিমানবন্দরে যান ইন্দিরা গান্ধী। সে সময় বঙ্গবন্ধুকে এক পলক দেখার জন্য ইন্দিরা গান্ধীর সঙ্গে সোনিয়া গান্ধীও ছিলেন বলে নিজেই বৈঠকে জানান।
এ সময় রাহুল গান্ধী জানান, তিনি বাংলাদেশের ব্যাপারে সব খোঁজ-খবরই রাখেন। বাংলাদেশ তৈরি পোশাকখাতে অভূতপূর্ব উন্নতি করেছে। বৈঠকে কংগ্রেসের অন্য নেতারা শেখ হাসিনা সরকারের উন্নয়নমূলক কর্মকাণ্ডে সন্তোষ প্রকাশ করেন।
বৈঠকের আগে রাহুল গান্ধীকে খাদি পাঞ্জাবি এবং 'কারাগারের রোজনামচা' ও 'বঙ্গবন্ধুর আত্মজীবনী' বই দু'টি উপহার দেওয়া হয় বলেও জানান বিপ্লব বড়ুয়া।
ভারতীয় জাতীয় কংগ্রেসের আমন্ত্রণে আওয়ামী লীগের তিন সদস্যের প্রতিনিধি দল গত শুক্রবার ভারতে গেছেন। তারা নয়াদিল্লির ইন্দিরা গান্ধী ইনডোর স্টেডিয়ামে শনিবার থেকে শুরু হওয়া দু'দিনব্যাপী ভারতীয় জাতীয় কংগ্রেসের ৮৪তম প্ল্যানারি সেশনে যোগ দেন। আগামী সোমবার প্রতিনিধি দলটির দেশে ফেরার কথা রয়েছে।