দেশে বর্তমানে চালু রয়েছে ৫৭টি বাণিজ্যিক ব্যাংক। তাই এখন আর নতুন ব্যাংক অনুমোদনের পক্ষে নয় কেন্দ্রীয় ব্যাংক। এরপরও চলছে দৌড়ঝাঁপ, সরকারের উচ্চপর্যায়ে চলছে নানা দেন-দরবার। দেশের গন্ডি পেরিয়ে বিদেশী লবিং শুরু করেছেন উদ্যোক্তারা। অনুমোদন দিতে পার্শ্ববর্তী দেশ ভারতের প্রভাবশালী নেতারা বাংলাদেশ ব্যাংকের উর্ধতন কর্মকর্তাদের ফোন দিচ্ছেন বলে জানা গেছে।
সংশ্লিষ্টরা বলছেন, অনিয়ম-দুর্নীতি আর নানা অব্যবস্থাপনায় বর্তমানে দুরবস্থার মধ্যে রয়েছে দেশের ব্যাংকিং খাত। বর্তমান সরকারের আমলে রাজনৈতিকভাবে অনুমোদন পাওয়া নতুন ব্যাংকগুলোর অবস্থা আরও নাজুক। এমন অবস্থায় নতুন করে ব্যাংক অনুমোদন দেয়া অযৌক্তিক বলে জানিয়েছেন ব্যাংকার ও অর্থনীতিবিদরা। তবে অর্থনীতিকে চাঙ্গা করতে আরও ব্যাংকের প্রয়োজন বলছে সরকার। তাই রাজনৈতিক বিবেচনায় প্রস্তাবিত তিনটি নতুন ব্যাংকের লাইসেন্স দেয়ার প্রক্রিয়া চলছে।
প্রস্তাবিত নতুন ব্যাংকগুলো হচ্ছে, পিপলস ইসলামী ব্যাংক, বাংলা ব্যাংক ও পুলিশ ব্যাংক। এদের মধ্যে পিপলস ইসলামী ব্যাংকের নেতৃত্বে আছেন যুক্তরাষ্ট্র প্রবাসী আওয়ামী লীগ নেতা এম এ কাশেম। বেঙ্গল গ্রুপের ভাইস চেয়ারম্যান জসীম উদ্দিনের প্রস্তাবিত ব্যাংকের নাম ‘বাংলা ব্যাংক’। এ ছাড়া পুলিশ বাহিনীর জন্য আলাদা ‘পুলিশ ব্যাংক’। কাগজে-কলমে ব্যাংক অনুমোদনের ক্ষমতা বাংলাদেশ ব্যাংকের হলেও নতুন ব্যাংকের সিদ্ধান্ত আসে সরকারের রাজনৈতিক বিবেচনায়। তাই কেন্দ্রীয় ব্যাংক ও অর্থনীতিবিদদের অনিচ্ছা সত্ত্বেও লাইসেন্স পাচ্ছেন উদ্যোক্তারা।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক বাংলাদেশ ব্যাংকের নীতি-নির্ধারণী পর্যায়ের এক কর্মকর্তা বলেন, বর্তমানে নতুন ব্যাংকের কোন প্রয়োজন নেই। সরকারের রাজনৈতিক বিবেচনায় আবারও ব্যাংক দেয়ার প্রক্রিয়া চলছে। এখন নতুন ব্যাংক অনুমোদন দেয়া হবে আত্মঘাতী সিদ্ধান্ত। সর্বশেষ অনুমোদন পাওয়া নতুন ব্যাংকগুলোর এখন করুণ অবস্থা। ফারমার্স ও এনআরবিসিসহ কয়েকটি ব্যাংকে হরিলুট চলছে। গ্রাহকের আমানতও খেয়ে ফেলা হয়েছে। রাজনৈতিক বিবেচনায় অনুমোদন দিলে কী অবস্থা হয়- এ থেকে আমাদের শিক্ষা নিতে হবে। অতীত থেকে শিক্ষা না নিয়ে আবারও লাইসেন্স দিলে ভবিষতে এ অবস্থা ভয়াবহ হবে। তিনি বলেন, ব্যাংকের লাইসেন্স দিতে লবিং চলছে। সরকারের এমন মহল থেকে ফোন আসে যা অবাক করার মতো। শুধু দেশ থেকে নয়, এখন বিদেশ থেকেও দেন-দরবার করা হচ্ছে। সম্প্রতি প্রস্তাবিত একটি ব্যাংকের (বাংলা ব্যাংক) উদ্যোক্তা ফোন দিয়ে আমাকে বলেন ভারতের এক সাবেক রাষ্ট্রপতির ছেলের সঙ্গে কথা বলেন। তিনি আমার কাছে খোঁজ-খবর জানতে চাইলেন। আমি শুধু বলেছি, হ্যাঁ ঠিক আছে।