স্থানীয়পর্যায়ে করোনা সংক্রমণ পরিস্থিতি বিবেচনায় নিয়ে যখনই প্রয়োজন হবে তখনই কোনো এলাকাকে রেড জোন হিসেবে ঘোষণা দেয়া হবে। জোনভিত্তিক লকডাউন নিয়ে বিভ্রান্তি নিরসনে মঙ্গলবার (১৬ জুন) এক সরকারি তথ্য বিবরণীতে এ বিষয়ে ব্যাখ্যা দেয়া হয়েছে।
এতে বলা হয়েছে, রেড জোন ঘোষণা বা রেড জোন পরিবর্তন একটি চলমান প্রক্রিয়া। স্থানীয় পরিস্থিতি বিবেচনায় নিয়েই যখন প্রয়োজন তা করা হবে এবং স্থানীয় কর্তৃপক্ষ তা বাস্তবায়ন করবে। এই বিষয়ে সকলের বিভ্রান্তি নিরসন হওয়া প্রয়োজন।
করোনা মোকাবিলায় বেশি আক্রান্ত এলাকাকে রেড (লাল), অপেক্ষাকৃত কম আক্রান্ত এলাকাকে ইয়েলো (হলুদ) ও একেবারে কম আক্রান্ত বা আক্রান্ত-মুক্ত এলাকাকে গ্রিন (সবুজ) জোন হিসেবে চিহ্নিত করা হয়েছে। রেড জোনকে লকডাউন করা হবে, সেখানে থাকবে সাধারণ ছুটি। ইয়োলো জোনে যেন আর সংক্রমণ না বাড়ে সেই পদক্ষেপ নেয়া হবে। সতর্কতা থাকবে গ্রিন জোনেও। লকডাউনের মেয়াদ হবে ১৪ থেকে ২১ দিন পর্যন্ত।
করোনা প্রতিরোধে গঠিত জাতীয় টেকনিক্যাল কমিটি ঢাকায় ৪৫টি এলাকাকে অত্যন্ত ঝুঁকিপূর্ণ বা রেড জোন হিসেবে চিহ্নিত করে তা লকডাউনের সুপারিশ করেছে। এর মধ্যে ঢাকা দক্ষিণ সিটি কর্পোরেশনের ২৮টি এবং ঢাকা উত্তর সিটি কর্পোরেশনের ১৭টি এলাকা রয়েছে। রয়েছে চট্টগ্রামের ১০টি এলাকাও।
জাতীয় টেকনিক্যাল কমিটি ঢাকা সিটির ৪৫টি এলাকাকে রেড জোন হিসেবে চিহ্নিত করে তা লকডাউনের সুপারিশ করলেও সুনির্দিষ্ট কোনো কার্যপরিধি, ম্যাপ ও নির্দেশনা না পাওয়ার কথা জানায় দুই সিটি করপোরেশন। তারা বলছে, যেসব এলাকা লকডাউনের জন্য চূড়ান্ত করা হয়েছে বা হচ্ছে সেসব এলাকার বিস্তারিত ম্যাপিং দিতে হবে। তা না হলে কোন এলাকার কতটুকু লকডাউনের আওতায় আনা হবে তা নিয়ে সমস্যা সৃষ্টি হবে। তালিকায় শুধুমাত্র এলাকার নাম বলা হয়েছে। এ বিষয়ে ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের মেয়র আতিকুল ইসলাম বলেন, ডিএনসিসির আওতাধীন যে ১৭টি এলাকা রেড জোন হিসেবে চিহ্নিত হয়েছে, সেগুলোর সুনির্দিষ্ট ম্যাপিং পাওয়ার পর ৪৮ থেকে ৭২ ঘণ্টার মধ্যে লকডাউন কার্যকর করা যাবে।
এমন বিভ্রান্তি নিরসনে তথ্য বিবরণীতে বলা হয়, নাগরিক সাধারণের জীবন-জীবিকা নির্বাহের বিষয়কে বিবেচনায় নিয়ে করোনাভাইরাস সংক্রমণ প্রতিরোধে সরকার কর্তৃক সারাদেশে ঘোষিত ৬৬ দিন সাধারণ ছুটির পর গত ৩১ মে থেকে সীমিত পরিসরে বিভিন্ন অর্থনৈতিক কার্যক্রম চালু করা হয়। কিন্তু, সম্প্রতি দেশের বিভিন্ন স্থানে করোনাভাইরাস সংক্রমণের পরিমাণ/হার বৃদ্ধি পাচ্ছে। এমতাবস্থায় স্বাস্থ্য অধিদফতরের মহাপরিচালক ‘সংক্রামক রোগ (প্রতিরোধ, নিয়ন্ত্রণ ও নির্মূল) আইন, ২০১৮’-এর সংশ্লিষ্ট ধারায় প্রদত্ত ক্ষমতাবলে সরকারের অনুমোদনক্রমে বাংলাদেশের বিভিন্ন এলাকায় কোভিড-১৯ রোগের সংক্রমণ প্রতিরোধ ও নিয়ন্ত্রণে ১০ জুন কতিপয় নির্দেশাবলী জারি করেন।
‘এই নির্দেশাবলীর উদ্দেশ্য কোভিড-১৯ রোগের চলমান ঝুঁকি বিচেনায় বাংলাদেশের যে কোনো ছোট বা বড় এলাকাকে লাল, হলুদ বা সবুজ জোন হিসেবে চিহ্নিত করা এবং তা বাস্তবায়ন করা।’
জোন ঘোষণার ক্ষমতা আইনানুযায়ী সংশ্লিষ্ট জেলার সিভিল সার্জনের কাছে অর্পণ করা হয় জানিয়ে তথ্য বিবরণীতে বলা হয়, তিনি (সিভিল সার্জন) স্থানীয় জনপ্রতিনিধি, সিভিল প্রশাসন, আইনশৃঙ্খলা ও সশস্ত্র বাহিনী এবং স্বেচ্ছাসেবকদের সহায়তায় জোনিং কার্যক্রম বাস্তবায়ন করবেন। জোন সুনির্দিষ্টভাবে সংশ্লিষ্ট এলাকার কোন অংশে কার্যকর হবে এবং এর পরিধি কী হবে তা স্থানীয় কর্তৃপক্ষকে ও কোভিড-১৯ সংক্রান্ত স্থানীয় কমিটিগুলোকে নির্ধারণ করার দায়িত্ব দেয়া হয়।
এতে আরও বলা হয়, স্বাস্থ্য অধিদফতর এ বিষয়ে একটি বিস্তারিত কৌশল বা গাইডলাইন তৈরি করে স্থানীয় কর্তৃপক্ষগুলোর মধ্যে বিতরণ করেছে। এটি স্বাস্থ্য অধিদফতরের ওয়েবসাইটে পাওয়া যাবে। এছাড়া জোনের সংজ্ঞা ও বাস্তবায়ন কৌশল সময়ে সময়ে পর্যালোচনা করে পরামর্শ দেয়ার জন্য একটি কেন্দ্রীয় কারিগরি গ্রুপ গঠন করা হয়েছে। স্থানীয় কর্তৃপক্ষ জোনিং সিস্টেমের হালনাগাদ সংজ্ঞা ও বাস্তবায়ন কৌশল অনুযায়ী অব্যাহতভাবে স্থানীয় পরিস্থিতি পর্যালোচনা করবে এবং জোনিং সিস্টেম চালু করতে হলে স্বাস্থ্য অধিদফতরের মতামত সাপেক্ষে তা বাস্তবায়ন করবে।
স্বাস্থ্য অধিদফতরের পরামর্শে প্রাথমিকভাবে তিনটি জেলায় (গাজীপুর, নারায়ণগঞ্জ ও নরসিংদী) এবং ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের রাজাবাজার (পূর্ব রাজাবাজার) এবং দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের ওয়ারীতে পরীক্ষামূলকভাবে জোনিং সিস্টেম চালু করা হয়েছে বলে তথ্য বিবরণীতে জানানো হয়।
এতে আরও বলা হয়, ঢাকার ওয়ারীতে জোনিং সিস্টেম চালুর জন্য সুনির্দিষ্ট এলাকা চিহ্নিতকরণের কাজ চলছে। এই পরীক্ষামূলক জোনিং সিস্টেমের অভিজ্ঞতা দেশের অন্যান্য এলাকায় জোনিং সিস্টেম চালু বা পরিবর্তনের বিষয়ে সহায়ক হবে। দেশের বিভিন্ন জেলা ও সিটি করপোরেশনও বর্ণিত কৌশল ও গাইড অনুসারে স্থানীয় পরিস্থিতি পর্যালোচনা করছে সেই অনুযায়ী তারা প্রয়োজনীয় সুপারিশ প্রণয়ন করে স্বাস্থ্য অধিদফতরের মতামত অনুযায়ী জোনিং সিস্টেম বাস্তবায়নের উদ্যোগ নিচ্ছে।