বৈশ্বিক মহামারি করোনা পরিস্থিতিতে ছাঁটাই নির্যাতন বন্ধ করে শ্রমিকদের প্রাপ্য মজুরি ও স্বাস্থ্য সুরক্ষা নিশ্চিতের দাবি জানিয়েছে বাংলাদেশ ট্রেড ইউনিয়ন কেন্দ্র (টিইউসি)।
মঙ্গলবার (২৩ জুন) দুপুরে জাতীয় প্রেস ক্লাবের সামনে অনুষ্ঠিত মানববন্ধনে টিইউসি নেতারা এ দাবি জানান।
ছাঁটাই নির্যাতন বন্ধ করে শ্রমিকদের প্রাপ্য মজুরি ও স্বাস্থ্য সুরক্ষা নিশ্চিতের আহ্বান জানিয়ে ঘোষণাপত্রে উল্লেখ করা হয়, বৈশ্বিক মহামারি করোনার কারণে বিশ্বের অন্যান্য দেশের ন্যায় বাংলাদেশেও সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে নিম্ন আয়ের খেটে খাওয়া শ্রমজীবী মেহনতি মানুষ।
করোনা সংক্রমণ প্রতিরোধে ঘোষিত সাধারণ ছুটি ও লকডাউনের ফলে গার্মেন্টস, পরিবহন, নির্মাণ ও ট্যানারিসহ প্রতিষ্ঠানিক ও অপ্রাতিষ্ঠানিক খাতের ব্যাপক সংখ্যক শ্রমিক কর্মচারী কর্মহীন হয়ে পরিবার পরিজনসহ অর্ধাহারে অনাহারে মানবেতর জীবন যাপন করছে।
শ্রমজীবী মানুষই হলো দেশের শিল্প ও অর্থনীতির মূল চালিকাশক্তি। তাই মহামারি পরিস্থিতিতে পরিবার পরিজনসহ তাদের জীবিকার নিশ্চয়তা ও স্বাস্থ্য সুরক্ষা নিশ্চিতে সর্বোচ্চ অগ্রাধিকার পাওয়ার কথা।
কিন্তু স্বার্থান্বেষী মালিকদের বিভিন্ন সময়ের খামখেয়ালি সিদ্বান্তে দেশের নিম্নআয়ের শ্রমজীবী মানুষ আজ একদিকে সর্বোচ্চ করোনা ঝুঁকির মধ্যে রয়েছে, অন্যদিকে চাকরি ও জীবিকার অনিশ্চয়তায় তাদের জীবনে দুর্বিসহ অবস্থা নেমে এসেছে।
সরকার রফতানিমুখী শিল্পের শ্রমিকদের তিন মাসের বেতন পরিশোধের জন্য ২ শতাংশ সুদে মালিকদেরকে পাঁচ হাজার কোটি টাকা প্রদান করেছে। কিন্তু অত্যন্ত দুঃখ ও পরিতাপের বিষয় হলো সরকারের নির্দেশনা উপেক্ষা করে কিছু কিছু গার্মেন্টস মালিক বিভিন্ন অপকৌশলে তাদের শিল্প কারখানা লে-অফ করছে, হাজার হাজার শ্রমিককে চাকরিচ্যুত করছে। রফতানিমুখী ট্যানারি শিল্পেরও অনেক কারখানার শ্রমিকদের ছাঁটাই করা হচ্ছে এবং নিয়মিত মজুরি পরিশোধ করা হচ্ছে না।
টিইউসির উত্থাপিত সুপারিশ ও দাবি সমূহ
১. বর্তমান পরিস্থিতি এবং মহামারি পরবর্তী সম্ভাব্য দুর্যোগ মোকাবিলায় সকল শ্রমজীবী মানুষের যথাযথ চিকিৎসা সেবাসহ স্বাস্থ্য সুরক্ষা ও খাদ্য নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে হবে।
২. মহামারি চলাকালীন শিল্প কলকারখানার স্থায়ী, অস্থায়ী কোনো শ্রমিককে চাকরিচ্যুত করা যাবে না এবং ইতিমধ্যে চাকরিচ্যুত শ্রমিক কর্মচারীদের চাকরিতেতে পুনর্বহাল করতে হবে।
৩. কোনো শিল্প কারখানা লে-অফ বা বন্ধ করা যাবে না।
৪. অবিলম্বে শ্রমিকদের বকেয়া বেতন-ভাতা পরিশোধ এবং মহামারি চলাকালীন শ্রমিকদের মজুরি প্রদান নিশ্চিত করতে হবে।
৫. গার্মেন্টস, চামড়া ও নির্মাণসহ ক্ষুদ্র ও মাঝারি শিল্প কারখানার শ্রমিকরা যাতে সরকার ঘোষিত আর্থিক প্রণোদনাপ্রাপ্ত হয় সে বিষয়ে পদক্ষেপ নিতে হবে। ৫০ লাখ করে তিন স্তরে দেড় কোটি অসচ্ছল মানুষকে রেশন কার্ডের মাধ্যমে আর্থিক সহায়তা প্রদানের যে সরকারি সিদ্ধান্ত রয়েছে তা অপ্রাতিষ্ঠানিক খাতের প্রকৃত অসচ্ছল শ্রমিকরা যাতে পায় তা নিশ্চিত করতে হবে।
৬. দেশের শ্রমঘন শিল্পাঞ্চল গুলোতে শ্রমিকদের যথাযথ চিকিৎসা নিশ্চিতের লক্ষ্যে করোনা শনাক্তকরণ ব্যবস্থাসহ আইসোলেশন সেন্টার নির্মাণ করতে হবে।
৭. প্রতিষ্ঠানিক খাতের শ্রমিকদের প্রয়োজন মতো ঝুঁকি ভাতা প্রদান করতে হবে।
৮. করোনা মহামারি পরিস্থিতিতে দেশের শিল্প ও শ্রমজীবী মানুষের ন্যায্য অধিকার ও স্বাস্থ্য সুরক্ষা নিশ্চিতে সরকার ও মালিকদেরকে এগিয়ে আসতে হবে।
মানববন্ধনে বক্তব্য রাখেন টিইউসির সহ-সভাপতি আবদুর রাজ্জাক, সাংগঠনিক সম্পাদক আব্দুল মালেক, প্রচার সম্পাদক মোবারক হোসেন, অর্থ সম্পাদক রুহুল আমীন, শিক্ষা ও গবেষণা সম্পাদক আসলাম খান।